১ম পর্ব
আগের পর্বে জেনেছি hidden disability কোন সুনির্দিষ্ট অক্ষমতা নয়; এর আওতা বিশাল; যা বোঝাতে ASD (Autism Spectrum Disorder) টার্মটি ব্যবহার করা হয়। সাধারণভাবে তিন ধরণের ডিজঅর্ডারকে ASD বলা হয়, এগুলো হলো-- ১. অটিজম, ২. অ্যাসপারগার সিনড্রোম, ৩. PDDNOS (Pervasive developmental disorder not otherwise specified; ইংরেজিটাই সহজবোধ্য )।
শারীরবৃত্তীয় রোগব্যাধি আর ASD আলাদা বিষয়। ম্যালেরিয়া বা পক্সের মতো রোগের উপসর্গ আমরা জানি; অন্য জটিলতা না থাকলে সাধারণত যেকোন রোগীর দেহে এর প্রভাব মোটামুটিভাবে একই। কিন্তু ASD'র প্রভাব সম্পর্কে সবার জন্য অভিন্নভাবে প্রযোজ্য কিছু বলা কঠিন। মেয়েদের চেয়ে ছেলেদেরই অধিকহারে ASD আক্রান্ত হতে দেখা যায়। ধারণা করা হয়, অটিজমের ক্ষেত্রে মেয়ে ও ছেলে শিশুর অনুপাত ১:৪ এবং অ্যাসপারগার সিনড্রোমের ক্ষেত্রে ১:৫। খুব অল্পবয়সেই, ভাবা হয় জন্মের সময় থেকেই, ASD'র কারণে শিশুর বিকাশ বাধাগ্রস্ত হয়। লক্ষণগুলো প্রকাশ পায় দেড় থেকে তিন বছর বয়সের মধ্যেই। শিশুর বিকাশের তিনটি প্রধান ক্ষেত্র রয়েছে, ASD যেগুলোতে প্রভাব ফেলে (প্রভাবের ধরণ সংক্ষেপে ব্র্যাকেটে দেয়া হলো)--
১. Social interaction বা সামাজিক মিথষ্ক্রিয়া (অন্য কোন ব্যক্তির প্রতি আগ্রহের অভাব বোধ করা। কে কী করছে তা নিয়ে আগ্রহ বা কৌতূহল না থাকা। অন্যদের আচরণ বুঝতে না পারা। বন্ধু হতে বা পেতে অনিচ্ছুক থাকা।)
২. Communication বা যোগাযোগ (কথা না শেখা। সীমিত শব্দভান্ডার ব্যবহার করে কোনমতে কথা বলা। কথা বলতে পারলেও আলাপচারিতা বা conversation এ সমর্থ না হওয়া।)
৩. Behaviour বা আচরণ (পুনরাবৃত্ত আচরণ অর্থাৎ একই কাজ বারবার করা। নিজস্ব রুটিন অনুযায়ী কাজ বা আচরণে অভ্যস্ততা এবং এতে অনমনীয় থাকা।)
এবার দেখা যাক, ASD'র তিন গ্রুপের কোনটিতে শিশুর বিকাশের এই ক্ষেত্রগুলো কীভাবে প্রভাবিত হয়।
অটিজম আক্রান্ত শিশুর বিকাশ উল্লিখিত তিনটি ক্ষেত্রেই বাধাগ্রস্ত হয়। এদের অনেকে কথা শিখতে পারেনা বা কথা শেখা বিলম্বিত হয় (কথা শেখা আর কথা বলার মধ্যে পার্থক্যটি লক্ষ্যনীয়। বাকযন্ত্রের গঠন বা অনুরূপ কারণে শারীরিক সীমাবদ্ধতার জন্য কথা বলতে না পারা ভিন্ন বিষয়। আর তেমন অসুবিধা না থাকা সত্ত্বেও কথা না বললে সেটা শেখার সমস্যা)। বেশীরভাগ অটিস্টিক শিশুর intellectual disability বা বুদ্ধিবৃত্তিক অক্ষমতা থাকে। ২০-৩০% অটিস্টিক শিশুর এই অক্ষমতা থাকেনা; যাদের অটিজমকে high-functioning autism বা অ্যাসপারগার সিনড্রোম বলা হয়।
অ্যাসপারগার সিনড্রোম আক্রান্ত শিশুদের সাধারণত: বুদ্ধিবৃত্তিক অক্ষমতা থাকেনা। কখনো থাকলেও সেটা খুবই স্বল্পমাত্রার হয়ে থাকে। কথা শেখার বিচারে তারা তেমন পিছিয়ে নেই। তাদের মূল সমস্যা এই কথাগুলোকে সামাজিক মেলামেশার ক্ষেত্রে কার্যকরভাবে ব্যবহার করা নিয়ে। যেমন অন্য কারো সঙ্গে আলাপচারিতায় অংশ নিতে তাদের সমস্যা হয়। কাউকে প্রশ্ন করা, অন্যের প্রশ্নের উত্তর দেয়া, বা কারও কথায় প্রাসঙ্গিক মন্তব্য করার ক্ষেত্রে অক্ষমতার জন্য তারা প্রায়ই অমিশুক ও নিভৃতচারী
হিসেবে চিহ্নিত হয়।
PDDNOS আক্রান্ত শিশুদের বুদ্ধিবৃত্তিক অক্ষমতা থাকতেও পারে, নাও থাকতে পারে। বিকাশের তিনটি ক্ষেত্রেই তাদের সমস্যা হতে পারে; কিন্তু এই সমস্যার মাত্রা এতটা প্রকট নয় যে অটিজম বা অ্যাসপারগার সিনড্রোমের diagnostic criteria পূরণ হতে পারে।
ASD'র মাত্রা নিরূপণ
এমন কোন সহজ একক "টেস্ট" নেই যা দিয়ে ASD'র প্রভাব বা মাত্রা নিরূপণ করা সম্ভব। এজন্য DSM-IV-TR (Diagnostic and Statistical Manual of Mental Disorders, 4th Edition, Text Revision)-এ বর্ণিত নিয়ম অনুসরণ করা হয়। এতে জন্ম থেকে শিশুর বেড়ে ওঠা পর্যালোচনা করা হয় এবং তার ভাষাগত দক্ষতা ও বুদ্ধিস্তর যাচাই করার জন্য সুনির্দিষ্ট পদ্ধতি প্রয়োগ করা হয়। এছাড়া বিভিন্ন প্রতিবেশ-পরিস্থিতি-অবস্থা তৈরি করে তার আচরণ পর্যবেক্ষণ করা হয়। এটা আসলে বিভিন্ন সম্পর্কিত বিষয়ে বিশেষজ্ঞদের তত্ত্বাবধানে সম্পন্ন অনেকগুলো অ্যাসেসমেন্টের সমষ্টি; এবং এই যাচাই প্রক্রিয়া সময়সাপেক্ষ।
--------------------------------------------------------------------
ক্রমশ পরবর্তী পর্বের আলোচ্য বিষয়: অটিজম নিয়ে ভ্রান্ত ধারণা, অটিস্টিক শিশু, ...
সর্বশেষ এডিট : ০৮ ই মার্চ, ২০০৯ সকাল ১১:২০